দশ নম্বর সংকেত থাকবে মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে। এছাড়া সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর এবং চাঁদপুর জেলা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
এছাড়াও চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ০৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা যাচ্ছে। উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমুহ ০৯ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
বাংলাদেশের আবহাওয়াজনিত সতর্ক সংকেতের মাপকাঠিতে এটাই সর্বোচ্চ সংকেত।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত মানে হল ঘূর্ণিঝড় উপকূল অতিক্রমকালে বন্দর ঝড়ের তীব্রতার কবলে পড়তে পারে। বন্দরের উপর দিয়ে বা পাশ দিয়েই ঝড় উপকূল অতিক্রম করবে।
এরপরে রয়েছে ১১ নং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সংকেত, যার মানে আবহাওয়ার বিপদ সংকেত প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের সাথে সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং স্থানীয় আবহাওয়া কর্মকর্তা পরিস্থিতি দুর্যোগপূর্ণ বলে মনে করেন।
ঝড়টি এখন মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৩৪৫ কিলোমিটার দূরে, পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৩৭০ কিলোমিটার দূরে আর চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৫২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বুধবার বিকাল/সন্ধ্যার মধ্যে সুন্দরবনের কাছ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
এই সময় উপকূলীয় জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০-১৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। এছাড়া সেখানে ভারী বৃষ্টিসহ ১৪০-১৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে বলে আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে।
খুলনার মোংলা থেকে সাংবাদিক আবু হোসাইন সুমন বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, সেখানে এখন দমকা বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে।
''রাত থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে আর দমকা বাতাস দিচ্ছে। আকাশ মেঘলা হয়ে আছে।'' তিনি বলছেন।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে সাংবাদিক আহসানুর রহমান রাজিব বিবিসি বাংলাকে বলছেন, এখানকার পরিবেশ এখন থমথমে হয়ে রয়েছে। অন্যান্য দিনের তুলনায় এখানকার চুনকুড়ি নদীর জোয়ারের পানি দুই ফুটের বেশি বেড়েছে।
ভারতের কলকাতা থেকে বিবিসির সংবাদদাতা অমিতাভ ভট্টশালী জানাচ্ছেন, রাত থেকেই কলকাতায় ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে অনীহা
উপকূলের বিভিন্ন স্থান থেকে সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করা হলেও এখনো মানুষজনের আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ কম।
মঙ্গলবার থেকেই উপকূলীয় জেলাগুলো থেকে মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হয়।
উপকূলের ১৩ টি জেলায় ২০ লাখ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়ার টার্গেট করা হলেও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সময় রাত দশটা পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ ৫৩ হাজার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কর্মকর্তারা বলেছেন, লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আনা এবং অনেক মানুষকে একসাথে রাখার ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব রক্ষার বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া হলেও বাস্তবতা বেশ কঠিন।
মোংলার সাংবাদিক আবু হোসাইন সুমন বলছেন, মঙ্গলবার প্রায় আট হাজার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে আজ মহাবিপদ সংকেত জারির পর আরো মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে পারেন।
''এই অঞ্চলের মানুষ সাধারণত ঝড়ের বেশি আগে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চায় না। যেহেতু মহাবিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে, তাই এখন হয়তো মানুষ কেন্দ্রে যাবে। বিকাল নাগাদ ঝড়টি আঘাত হানার কথা। মানুষ হয়তো তার আগে আগে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে শুরু করবে।''
সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে সাংবাদিক আহসানুর রহমান রাজীব জানাচ্ছেন, মহিলা বাচ্চাদের আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে দেখা গেলেও, বেশিরভাগ পুরুষ এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে যায়নি। নদী তীরবর্তী অনেক বাড়ির বাসিন্দাদের ঘরবাড়িতেই থাকতে দেখা গেছে।
সরকারের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির অপারেশন বিভাগের পরিচালক নূর ইসলাম খান বলেছেন, আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষকে নেয়া এবং সেখানে নেয়ার পর সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে তাদেরই সন্দেহ রয়েছে। তবে কিছু ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা তারা করছেন।
তিনি বলছেন, ''এইবার আমাদের কাছে খুবই কঠিন, কারণ করোনা সংক্রান্ত কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে তাদের আনা, শেল্টারে নিয়ে সেখানে রাখা এবং ব্যবস্থাপনা করা কঠিন হবে। আগে যেমন জোরাজুরি করতে পারতো, বৃদ্ধদের কোলে করে নিয়ে আসতে পারতো, ধরে নিয়ে আসতো - সেটা এবার হবে না হয়তো। কিন্তু আন্তরিকতার কোন ঘাটতি নেই।
No comments:
Post a Comment